আমার পাইথন অভিজ্ঞতা - শুরুর দিকে
আমার পাইথন অভিজ্ঞতা - শুরুর দিকে
চাচ্ছিলাম ফেইসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে এই লিখাটা দিতে। কিন্তু মনে হল পোস্ট আকারেই লিখি, সমস্ত লিখাই যে টিউটোরিয়াল টাইপ হতে হবে তা তো না। আজকে আমি কোন টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে লিখব না, বরং লিখব পাইথন বাংলাদেশের কমিউনিটির যাত্রার প্রথম দিকের সময়টা নিয়ে, আর আমি যাই বলব তা হবে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মন্তব্য।
প্রায় ৬ বছর আগে লিখা আমার এই আর্টিকেলটির দিকে চোখ গিয়েছিল আমার কিছুদিন আগে।অনেক আগের লিখা, ভুল ভ্রান্তি গুনে শেষ করতে পারব না, কিন্তু আমার মনে হল, আমি পাইথন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ফিলিংস নিয়ে লিখেছি, ল্যাঙ্গুয়েজ শিখার ব্যবস্থা নিয়ে লিখেছি, প্রোগ্রাম দর্শন ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাটিটিউড নিয়েও লিখেছি তবে কখনোই লিখতে পারিনি বাংলাদেশের পাইথনের প্রথম দিকের সময়টা নিয়ে, কমিউনিটির আবির্ভাবের সেই সময়টা নিয়ে যখন কোন দেশী পাইথন প্রোগ্রামারের খোজ পাওয়া মানে মনে হত হারিয়ে যাওয়া ভাই খুঁজে পেয়েছি। আজকে আমি তা করার চেষ্টা করব। আমি তেমন একটা আক্সট্রভার্ট ছিলাম না, কাজেই আমার দেখা ইতিহাস বিবৃতি হয়ত হবে একটা ছোট সাবসেট আসল ঘটনার যার বেশীরভাগ আমার চোখে দেখা ও আমার সাপেক্ষে বলা। আর বেশ কিছু মানুষের নাম না বললেই নয় এই মর্মে কাজেই এবার আমি সচেষ্ট থাকব যেন কারও মনঃক্ষুণ্ণ না হয়।
২০০১ এ আমি পাইথন নিয়ে প্রথম ঘাটাঘাটি করি এবং এরপর থেকে আমার ক্লাসের সব এসাইনমেন্ট পাইথনে করার চেষ্টা করতাম, বলা যেতে পারে, আমার সব প্রোগ্রামিং এসাইনমেন্টের ২ দফা সমাধান হত, প্রথমে স্কুল সাপোর্টেড ল্যাঙ্গুয়েজ (আমি নর্থ সাউথে পরতাম কাজেই জাভা) এবং তারপর পাইথন। শেষের দিকে প্রথমে পাইথন ও পরে জাভা (মাঝে মাঝে আবার সি) দিয়ে সমাধান করতাম। মজার বিষয় হল, আশপাশে কোন পাইথন প্রোগ্রামার দেখতাম না, ল্যাঙ্গুয়েজের নাম শুনেছে এমন মানুষও পাইনি তখন। এরপর ২০০৩ এর দিকে সি-এস-সি ৩২৫ কোর্সে আমাদের ল্যাবে পাইথন শিখানো হয়, ফাইনালি পাইথন নিয়ে কথা বলার মত অনলাইন বহির্ভুত মানুষ পাওয়া গেল, তবে মনে হচ্ছিল না কোর্স পরবর্তি ইন্টারেস্ট কেউ ধরে রাখবে, অন্তত আমার সেকশানে না, কারণ হয়ত একটাই, পাইথন দিয়ে চাকরি হবে না, জাভা ও নতুন নতুন পপুলারিটি পাওয়া পিএইচপি শিখেই কুল পাই না তারপর আবার পাইথন?
কোর্স শেষ, সাথে সাথে শেষ পাইথন নিয়ে কোন ধরণের সামাজিকতা। এখানে বলে রাখছি যে আমার স্কুলের সামাজিকতার গণ্ডি সচরাচর আমার ক্লাস/গ্রুপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত, হয়ত পাইথন প্রোগ্রামার পাশের ক্লাসেই ছিলেন, কিন্তু আমার চোখে পরেননি কেউ, হয়ত আমার সোশিয়াল সার্চিং ক্যাপাবিলিটি তেমন ভাল ছিল না। পাইথন নিয়ে ক্লাস এসাইনমেন্ট অব্যাহত রইল, গ্র্যাজুয়েশান শেষে নিলাম এক ভুল সিধ্বান্ত- এমবিএ, আমি একেবারেই এমবিএ ম্যাটেরিয়াল না কাজেই বেশি একটা সময় নষ্ট না করে কেটে পরি (অর্থাৎ ড্রপ করে দেই জিনিসটা, সবচেয়ে ভাল ডিসিশান ওই বছরের), এরপর চাকরি খোজার পালা এবং হঠাত একদিন আমার দোস্ত ও ব্যাচমেইট গর্কি কল দিল আমাকে আর বলল ওর সাথে কাজ করব কিনা ফাইন্ডারে, ভেহিকল ট্র্যাকিং, পিএইচপি বেইজড, কিছুটা সি এর প্রয়োগ রয়েছে। পিএইচপি নিয়ে তেমন একটা কাজ করিনি তখন কাজেই ভাবলাম, পিএইচপি কতোটাইবা খারাপ হবে (আহা, ভুল ভাঙ্গার শব্দ যদি শোনা যেত!)। যাই হোক, ৬ মাস সম্ভবত আমরা সাফার করি পিএইচপি নিয়ে, এরপর হঠাৎ গর্কি একদিন বলল, “পাইথন নিয়ে কাজ করবি?” অবাক বিষয়, আমি রাজি হলাম না, বললাম, অনেক বড় প্রজেক্ট, পাইথনে হয়ত লোক পাব না, আটকে গেলে সাহায্য পাব না, থাক, বাদ দেই। আমার থেকে এমন উত্তর হয়ত আশা করা হয়নি কিন্তু তা-ই হয়েছে। আমি আসলেই পাইথন রেখে পিএইচপি অব্যাহত রাখার কথা বলি, তা ছিল ২০০৯ এর প্রথম দিকে।
এর কিছুদিন পরই আমার নজর পরে জিওজ্যাঙ্গোর দিকে। তখনকার দিনে তা জ্যাঙ্গোর ডকুমেন্টেশানের পার্ট ছিল না, আলাদা সাইট হিসেবে ছিল (১.১ ভার্সন)। ডকুমেন্টেশান পরে ভাবলাম, অনেক উপকার হয় আমাদের ইউস কেইসে, আর মনে হল, রিস্ক একটা নেই, প্যারালালভাবে বানিয়ে দেখি, সেই শুরু হল যাত্রা, ২০০৯ এর মাঝামাঝি। তিন মাস পর সিস্টেম রেডি, যা পরবর্তি ৭ বছর চলে (এরপর গর্কি নির্মমভাবে জ্যাঙ্গো ফেলে টর্নেডো নিয়ে আসে, কিন্তু সেই গল্প গর্কির বলার বিষয়, আশা করব কোন এক পাইকনে আমরা শুনব তার মুখে)। আরও তৈরি করি কোথায় ডট কম, কিছু ছোট খাট সার্ভিস আরও কতকি।
এরপর একদিন আমার চোখ পড়ল সুবিন ভাইয়ের ব্লগের দিকে, লাইফ ইজ শর্ট, ইউজ পাইথন, সম্ভবত ছিল তাঁর ব্লগের ট্যাগলাইন, আমি তাঁর ব্লগ (বেশ ভাল ব্লগ, সুবিন ভাই বলে কথা) পড়লাম পরে, আগে করলাম কমেন্ট, ওই যে বলেছিলাম না যে, দেশী পাইথন প্রোগ্রামার পাওয়া তখন ছিল হারিয়ে যাওয়া বন্ধু পাওয়ার মত, হয়ত আজকের প্রোগ্রামাররা তা বুঝবেন না, সময়টাই ছিল ওরকম। তো এরপর সুবিন ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা হয়, ২/১ বার রবীন্দ্র সরবরে দেখাও হয়। অনেক আলোচনা হয় পাইথন নিয়ে, বাংলাদেশে পাইথন প্রোগ্রামার সংখ্যা বাড়ানো যায় কিভাবে তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। হুট করে একদিন গ্রুপ খুলে বসলাম “বিডি পাইথনিস্তাস”। অনেক কষ্টে ডেকে ডেকে মানুষ আনতাম গ্রুপে, বুঝাইতাম পাইথন কী, তা দিয়ে কী করা যায় ইত্যাদি, বেশিরভাগই পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে যেত, কেউ কেউ থাকত, তবে এর কোন “ফিউচার” না থাকাতে তেমন গুরুত্ব দিত না। একটা হ্যাকাথন হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের- স্যানিটেশান হ্যাকাথন, সেখানে মেন্টর ছিলাম, হয়ত এর প্রভাবে কোন রকম ২০০ তে উঠালাম আর এর কিছুদিন পরেই দেখলাম “পাইচার্মারস” নামে আরেকটা গ্রুপ, যেইখানে বেশ কিছু অ্যাক্টিভ মেম্বার এবং অ্যাডমিন। পরিচয় হল আবু আশরাফ মাসনুনের সাথে, ২০১৩ এর দিকে হবে, আমি মাসনুনকে মেসেজ দেই, পরিচিত হই আর কিছু আইডিয়া শেয়ার করি। ভাবলাম, একই কমিউনিটিতে দুই দুইটা গ্রুপ একই টপিকে রেখে লাভ নাই, একত্রিত হয়ে যাওয়াই ভাল, সোর্স অব ট্রুথ একটা থাকলে কনফিউসান কম থাকে। তখনকার দিনে গ্রুপ আর্কাইভিং ছিল না, তবে একটা মেসেজ দিয়ে “বিডি পাইথনিস্তাস” বন্ধ করে “পাইচার্মার্স” জয়েন করতে বলি ওই গ্রুপকে, এরপর ফ্রি ফ্রি-তে পাইচার্মারসের অ্যাডমিন পদ পেয়ে যাই, গ্রুপ-শক্তি হয়তবা ৩০০/৪০০ এর বেশী হবে না তখন। আজ সেই গ্রুপ “পাইথন বাংলাদেশ” নামে পরিচিত, ২৪১১৭ মেম্বার ছিল কিছক্ষণ আগে, এখন কত জানি না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করে পাইথন বাংলাদেশ গ্রুপ খোলা দিয়ে আজকের এই পোস্টের “ইতিহাস” পর্ব শেষ করেছি, কোন প্যাটার্নে ফেলতে চাইনি এই লিখা নিয়ে, কিন্তু ভাবছিলাম কিছুদিন আগে, একটা ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কতটাই না ইমোশন কাজ করেছে এক সময়ে, কত মানুষের সাথে ঝগড়া/তর্ক (ইউনিভার্সিটির টিএ-রাও বাদ যায়নি), আবার কতবার ডাবল আসাইনমেন্ট, চ্যাটরুমে ফ্লেমিং, অতিরিক্ত সময় থেকে খুশি মনে কাজ করা (শুধুমাত্র ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য) এবং অন্যখানে “ভাল” অফার পরিত্যাগ করা, আরও কত কী। আমি অ্যাক্টিভলি চারটা ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ করি এখন। প্রফেশনালি ছয়টা নিয়ে কাজ করা হয়েছে কোন না কোন সময়ে। ইউনিভার্সিটিতে চারটা। হয়ত আমি এখন এলিক্সির নিয়ে লিখালিখি অথবা প্রেজেন্টেসান দেই, কিন্তু কোন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ যদি আমার ক্যারিয়ারকে অথবা প্রোগ্রামিং প্যাশানকে ডিফাইন করে তবে তা হবে পাইথন। আর যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় প্রোগ্রামিং স্কিলের সাথে তৎসঙ্ক্রান্ত সামাজিকতার কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু আমার মতে কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা বেশ বড় ভূমিকা পালন করতে পারে তা আপনার পার্সনাল স্কিল অথবা কমিউনিটির বয়স যাই হোক না কেন। এবং তা হয়ে আসছে আমাদের কমিউনিটিতে সেই ইউজনেটের সময় থেকে, সোশ্যাল আক্টিভিটি অনেকটাই শেপে এনেছে ওপেন সোর্স মুভমেন্টকে।
পাইথন নিয়ে তো অনেকদিন হল কাজ করছি, কিন্তু আমার স্কিল আমার নজরে কিছুই না। তবে বলতে পারি, পাইথন প্রোগ্রামিং অনেক অল্প বয়সে নিজের স্কিলকে উন্নত করাটাকে পার্সনাল গোল হিসেবে দেখতে শিখিয়েছে, যেই মানুষগুলোর কথা বললাম, তাঁরা আমার অ্যাটিটিউডের সঠিকতাকে ভেরিফাই করেছেন, যেমনটা করেছে ২০০ থেকে ২০০০০ এ উঠে যাওয়া, দুই দুইটা সফল পাইকন অর্গানাইজ করা গ্রুপটা। আমি সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য এবং হয়ত তাদের সম্পর্কে আরও কিছু বলব যদি এই টাইপের কিছু লিখতে ইচ্ছা করে।
[এই পোস্টে যা লিখা হয়েছে সব আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং এর ইনফরমেশানের সঠিকতা আমার স্মরণশক্তির সমানুপাতিক]